রাজ্যের মহিলাদের জন্য দুর্দান্ত সুখবর। পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের মহিলাদের আত্মনির্ভর করে তুলতে এতদিন পর্যন্ত অনেকগুলি প্রকল্প চালু করেছে। এইসব প্রকল্প গুলির মধ্যে সবচাইতে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পটি। আর ঠিক সেই ভাবেই আবারো পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী করে তুলতে এক নতুন প্রকল্প নিয়ে এল রাজ্য সরকার। কি নাম এই নতুন প্রকল্পের? কারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন? এই প্রকল্পের আওতায় কিভাবে আবেদন করতে হবে? এইসব বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য জানতে হলে প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকুন। নীচে এইসব বিষয় গুলির সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আসন লাভ করার পর থেকেই মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের সাধারণ মানুষের কল্যানার্থে একাধিক প্রকল্পের সূচনা করেছেন। এই প্রকল্প গুলির আওতায় এসে উপকৃত হয়েছেন বাংলার অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে বাংলার গ্ৰামাঞ্চলের মহিলারা তাদের নিজেদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যে কাজগুলি করে থাকেন তাদের সেই প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তাদের প্রতিভাকে সারা রাজ্য তথা সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী।
এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারা যাতে নিজেদের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হতে পারেন সেই কারনে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়। বর্তমানে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে মোট ১২ লক্ষ ১ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠী চলছে এবং রাজ্যের ১ কোটি ২১ লক্ষ পরিবারের মহিলারা এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলির আওতায় রয়েছেন।
স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তোলার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গের গ্ৰামাঞ্চলের মহিলাদের আর্থিক সাহায্য প্রদানের মাধ্যমে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে সাহায্য করা। বাংলার যে সকল মহিলারা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত রয়েছেন তাদের মধ্যে বহুজন রয়েছেন যারা সেলাইয়ের কাজে দক্ষ আবার এমন বহু মহিলা রয়েছেন যারা হোমমেড খাবার বানানোতে পটু আবার এমন অনেক মহিলা রয়েছেন যারা হস্তশিল্পকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বানানোতে দক্ষ। এইসব মহিলাদের সুপ্ত প্রতিভা যাতে তাদের ঘরের গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ না থেকে সারা রাজ্য তথা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে সেটা সম্ভব করে তুলতেই এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আমাদের রাজ্যে যে সরকারি স্কুল গুলি রয়েছে বেশ কিছু বছর হল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সেই স্কুল গুলিতে বিনামূল্যে ছাত্র ছাত্রীদের রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্কুলের ইউনিফর্ম দেওয়া হয়। এইসব ইউনিফর্ম গুলি বানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের। যাতে তারা এই ইউনিফর্ম গুলি বানিয়ে কিছু টাকা উপার্জন করতে পারেন।
এছাড়াও আমাদের রাজ্যে বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেইসব মেলাতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলাদের হাতে বানানো জিনিসের স্টল বসানো হয়। যেখানে তাদের নিজের হাতে বানানো আচার, ফুলদানি, আসন, জামা কাপড়, ব্যাগ, রুমাল, টেবিলের কভার, অক্সিডাইজ জুয়েলারি ইত্যাদি বিক্রি করা হয়। আসন্ন নতুন বছর অর্থাৎ ২০২৫ এর ১০ ই জানুয়ারি কলকাতার দেশবন্ধু পার্কে ও ২৪ শে জানুয়ারি পার্ক সার্কাস মাঠে দুটি মেলা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই মেলা দুটিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে বানানো পন্য সামগ্রী বিক্রি করা হবে।
শুধু তাই নয় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বানানো জিনিস গুলি অনলাইন মার্কেটিং এর সঙ্গে যুক্ত করতে ই -বিক্রয় কেন্দ্র চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যার মাধ্যমে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত মহিলারা বাড়িতে বসেই তাদের নিজেদের হাতে বানানো পন্য সামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারবেন। রাজ্য সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগের ফলে অনেক মহিলারাই বাড়িতে বসে নিজেদের প্রতিভা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন সেইসঙ্গে ঘরের বাইরে না বেড়িয়ে বাড়িতে বসেই আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন।
এতক্ষণ ধরে আমার যে প্রকল্পের বিষয়ে কথা বলছিলাম তার নাম হল আনন্দধারা প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলার ঘরে ঘরে মহিলাদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বাংলার অসংখ্য মহিলা এই আনন্দধারা প্রকল্পের আওতায় এসে আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী হয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছেন। আগামী দিনে যাতে তারা এই আনন্দধারা প্রকল্পের আওতায় এসে আরও বেশি করে উন্নতি করতে পারেন তার জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
আরও পড়ুন: CLICK HERE