32,000 Primary Case Update: অবশেষে দুর্নীতির প্রমাণ আদালতের হাতে, রায়ে নির্ভর করছে হাজারো শিক্ষকের ভবিষ্যৎ

২০১৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩২,০০০ শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। অবৈধভাবে অনেকেই চাকরি পেয়েছে এমন অনেক তথ্য সামনে এসেছিল। পরে ২০২২ সালে কিছু প্রার্থী এই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ ছিল, নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। সেই মামলারই ধারাবাহিক শুনানি চলাকালীন উঠে এসেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং আইনি বিতর্ক। বর্তমানে এই মামলার ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে আছেন লক্ষাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক। এই রায়ের উপর নির্ভর করছে একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার ভবিষ্যৎ। পূর্বতন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৩২ হাজার প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে দিয়েছিলেন।

আদালতের মূল পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্ন

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় চ্যালেঞ্জ করে চলমান এই মামলার শুনানিতে আদালত বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্ন তোলে। বিচারপতিরা বলেন—

🔍 দুর্নীতির প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে।
যখন শিক্ষকদের পক্ষে আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্র জানতে চান, “দুর্নীতি কোথায় হয়েছে?”, তখন বিচারপতি একটি নথি তুলে ধরে বলেন, “তাহলে এটিই কী?” — যা স্পষ্ট করে যে আদালতের কাছে দুর্নীতির নির্দিষ্ট প্রমাণ আছে।

📌 নম্বর বিভাজনের অভাব:
ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্টের নম্বর আলাদাভাবে না দেখানোয় প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা কঠিন হয়েছে বলে আদালত মন্তব্য করেছে।

📌 পর্ষদের নীরবতা:
বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, কেন আগের শুনানিগুলোতে পর্ষদ কিছু বিষয়ে চুপ ছিল?

📌 পর্ষদ দুর্নীতিগ্রস্ত হলে, তারা নতুন নিয়োগে উপযুক্ত কি না?
এই গুরুতর প্রশ্নও আদালতে উঠে এসেছে।

শিক্ষকদের পক্ষে আইনজীবীর সওয়াল

অনিন্দ্য মিত্রের যুক্তিগুলি:

যুক্তি ব্যাখ্যা
মামলার উদ্দেশ্য প্রশ্নসাপেক্ষ ২০১৭ সালের নিয়োগের বিরুদ্ধে মামলা ২০২২ সালে কেন? আবেদনে চাকরি বাতিলের দাবি স্পষ্ট ছিল না।
অপর্যাপ্ত কারণ একক বেঞ্চের রায়ে অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের চাকরি বাতিলের যথেষ্ট ভিত্তি ছিল না।
কাট-অফ মার্কস বিভ্রান্তি আবেদনকারীরা যে ১৪.১৯ কাট-অফ মার্কসের কথা বলছেন, তা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার SC শ্রেণির জন্য প্রযোজ্য। অন্য জেলাগুলিতে কাট-অফ ভিন্ন ছিল। এমনকি ১৩-র নিচে পেয়েও অনেকেই চাকরি পেয়েছেন।
অ্যাপটিটিউড টেস্টের যুক্তি দুর্বল আবেদনকারীদের মধ্যে মাত্র ৭ জন মৌখিক অভিযোগ করেছেন, যারা নিজেরাও কম নম্বর পেয়েছেন। তাদের কোনও জেরা করা হয়নি।
ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন ৩২,০০০ শিক্ষককে নিজেদের পক্ষে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অবস্থান

প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী এখন কঠিন চাপের মুখে। আদালতের সামনে পর্ষদকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে হবে যে নিয়োগের প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত ছিল। না পারলে, বিপদে পড়তে পারে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া। বিচারপতিরা পর্ষদকে সতর্ক করেছেন—“আপনারাই বলছেন আপনারা দুর্নীতিগ্রস্ত নন, প্রমাণ করুন।”

এই মামলার মূল বিতর্কের পয়েন্টগুলো এক নজরে

বিষয় বিবরণ
✅ মামলার শুরু ২০২২ সালে দায়ের
🧑‍🏫 শিক্ষক নিয়োগ ২০১৭ সালে ৩২,০০০ জন
⚠️ অভিযোগ কাট-অফ মার্কস জালিয়াতি, নম্বর বিভাজনের অভাব, দুর্নীতি
🧾 দুর্নীতির প্রমাণ বিচারপতির কাছে সরাসরি নথি
📍 মামলার বর্তমান অবস্থা শুনানি চলছে
📅 পরবর্তী শুনানি  আজ

শিক্ষকদের উদ্বেগ ও মানসিক চাপ

এই মামলার ফলে ৩২ হাজার শিক্ষক বর্তমানে তীব্র মানসিক চাপে রয়েছেন। কেউ ইতিমধ্যেই চাকরিতে রয়েছেন, কেউ নতুন নিয়োগের অপেক্ষায়। এই মামলার রায়ের ওপর নির্ভর করছে তাঁদের জীবনের ভবিষ্যৎ। এক শিক্ষক জানিয়েছেন:

“চাকরি চলে গেলে শুধু আমার নয়, আমার পুরো পরিবারের জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।”

সম্ভাব্য ফলাফল কী হতে পারে?

👉 যদি আদালত পর্ষদের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে:

  • নিয়োগ বাতিল হতে পারে
  • নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হতে পারে
  • দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে

👉 তবে যদি পর্ষদ দুর্নীতির প্রমাণ খণ্ডন করতে পারে, তাহলে:

  • নিয়োগ বহাল থাকতে পারে
  • কেবল নির্দিষ্ট দোষীদের বাদ দেওয়া হতে পারে

৩২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ মামলা শুধু একটি আইনি ইস্যু নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যতের প্রশ্ন। দুর্নীতির অভিযোগ সত্য হলে, দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়া উচিত। তবে একইসাথে যাঁরা প্রকৃতভাবে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও নজর রাখা জরুরি।

FAQs:

Q1. ৩২ হাজার শিক্ষক মামলার রায় কবে হবে?
উ: মামলার শুনানি আজ দুপুর ২টোতে রয়েছে। রায় শীঘ্রই হতে পারে।

Q2. এই মামলার কারণে শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হতে পারে?
উ: হ্যাঁ, যদি দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং পর্ষদ ব্যর্থ হয়, তাহলে নিয়োগ বাতিল হতে পারে।

Q3. কাট-অফ মার্কস নিয়ে বিভ্রান্তি কেন?
উ: আবেদনকারীরা যে কাট-অফের কথা বলছেন, তা ছিল নির্দিষ্ট জেলার জন্য। সমস্ত জেলার কাট-অফ ছিল আলাদা।

Q4. আদালতের হাতে দুর্নীতির প্রমাণ আছে?
উ: হ্যাঁ, বিচারপতি সরাসরি একটি নথি দেখিয়ে তা উল্লেখ করেছেন।

Leave a Comment