আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জারি করা হয়েছে তীব্র সতর্কতা। তৈরি হয়েছে গভীর নিম্ন চাপ যার দরুন আজ সন্ধ্যার মধ্যেই দক্ষিণবঙ্গের অন্তত তিনটি জেলায় আছড়ে পড়তে চলেছে প্রবল কালবৈশাখী। সঙ্গে থাকবে বজ্রবিদ্যুৎ, শিলাবৃষ্টি এবং দমকা ঝড়ো হাওয়া। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় বিশেষ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হলে আপনাকে বিস্তারিতভাবে জানতে হবে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আছড়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় দমকা হাওয়া।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঝড়ের গতিবেগ ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কিছু জেলায় ৩০-৫০ কিমি বেগে দমকা হাওয়া ও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। নিচে এই ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন রইল।
কোন কোন জেলায় ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা?
আজকের আবহাওয়ার সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, তিনটি জেলা বিশেষভাবে ঝড়ের কবলে পড়তে চলেছে। সেগুলি হলো:
১. পূর্ব বর্ধমান:
- এই জেলাতেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
- ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ৬০ থেকে ৭০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
- রয়েছে তীব্র শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতের আশঙ্কা।
- এলাকার কৃষকদের ইতিমধ্যেই সতর্ক করা হয়েছে, কারণ এই ঝড় ফসলের ক্ষতি করতে পারে।
২. নদীয়া:
- নদীয়ার বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
- বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়ো হাওয়ার গতি থাকতে পারে ৩০ থেকে ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা।
- বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. পশ্চিম বর্ধমান:
- এখানেও রয়েছে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা।
- দমকা হাওয়ার গতিবেগ ৩০-৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা হতে পারে।
- স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এছাড়াও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলোতে আগাম সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বিশেষ করে কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকাগুলোতে দমকা হাওয়া এবং সঙ্গে ঝড় বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই জানানো হয়েছে।
এই কালবৈশাখী কেন এত ভয়ঙ্কর?
বসন্ত শেষে গ্রীষ্মের প্রারম্ভে বঙ্গোপসাগর এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বায়ুমণ্ডলে তাপমাত্রার ব্যাপক পার্থক্যের কারণে শক্তিশালী কালবৈশাখী গঠিত হয়। আজকের মতো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে উষ্ণ এবং আর্দ্র বায়ুর সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়, এর ফলে তীব্র ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় এবং বজ্রগর্ভ থেকে মেঘের জন্ম হয়। যার দরুন প্রবল শিলাবৃষ্টি সহ বজ্রপাতের আগাম সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে।
আজকের ঝড়টি এমন একটি সিস্টেমের অংশ, যা উত্তর-পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। সেই কারণেই পূর্ব বর্ধমান থেকে নদীয়া পর্যন্ত একাধিক জেলায় এর প্রভাব পড়ছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পদক্ষেপ কী?
আবহাওয়া দফতরের সতর্কতা পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় প্রশাসন নিচে দেওয়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে:
- স্কুল ও কলেজগুলিতে আগাম সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
- চাষিদের ফসল ঢেকে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
- মাঠে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ব্লক প্রশাসন।
- পল্লী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির দরুন বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ও খুঁটি ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- জরুরি পরিষেবাগুলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যেমন: দমকল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিপর্যয় মোকাবিলা দল।
কীভাবে সুরক্ষিত থাকবেন এই আবহাওয়ায়?
এই সময় কিছু সতর্কতা মেনে চললে ঝড়ের সময় নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা সম্ভব:
- ঘরের বাইরে না বেরোনোই ভালো – বিশেষ করে খোলা মাঠ, জলাশয় বা বিদ্যুতের খুঁটির কাছাকাছি যাওয়া একেবারেই উচিত নয়।
- মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস চার্জে না রাখা – বজ্রপাতের সময় এগুলি বিপজ্জনক হতে পারে।
- গাড়ি চালানো বন্ধ রাখা – প্রবল ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়তে পারে, তাই রাস্তায় থাকাটা বিপজ্জনক।
- খোলা ছাদ বা বারান্দায় না থাকা – ঝড়ে উড়ে যাওয়া বস্তু গুরুতর ক্ষতি করতে পারে।
- প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের হেল্পলাইন নম্বর সংরক্ষণ করুন।
আবহাওয়ার পরবর্তী আপডেট কখন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক দফায় আবহাওয়ার এমন রূপ থাকতে পারে। প্রতিটি আপডেট প্রতি ৩ ঘণ্টা অন্তর জারি করা হবে। এজন্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলোতে আগাম সতর্কবার্তা জানানো হয়েছে এবং জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে তারা আবহাওয়া দপ্তরের নির্দেশের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন কাজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এজন্য অবশ্যই রিয়েল টাইম মোবাইল অ্যাপ বা টিভি চ্যানেল ফলো করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চাষিরা কীভাবে ক্ষয়ক্ষতি রোধ করবেন?
চাষিদের জন্য এই মুহূর্তে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে যাঁদের জমিতে এখনো ধান বা গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির চাষ চলছে। তাঁদের উদ্দেশ্যে নিচে কিছু জরুরি পরামর্শ দেওয়া হলো:
- ফসল ঢেকে রাখতে ত্রিপল বা পলিথিন ব্যবহার করুন।
- গাছগুলির পাশে বাঁশ বা খুঁটি দিয়ে সমর্থন দিন, যাতে ঝড়ে গাছ না ভেঙে পড়ে।
- ইউরিয়া বা রাসায়নিক সারের ব্যবহার আপাতত বন্ধ রাখুন, বৃষ্টির জলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- সরকারি কৃষি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন—কোনও ক্ষয়ক্ষতি হলে সরকারি সাহায্য পাওয়া সম্ভব।
আগামী দিনে আবহাওয়ার সম্ভাব্য চিত্র
আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সপ্তাহ জুড়েই পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। কালবৈশাখীর প্রভাব:
তারিখ | সম্ভাব্য অবস্থা |
---|---|
১৩ মে | প্রবল ঝড় ও শিলাবৃষ্টি (আজ) |
১৪ মে | হালকা বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত |
১৫ মে | আংশিক মেঘলা আকাশ |
১৬ মে | ফের কালবৈশাখীর সম্ভাবনা |
উপসংহার
সার্বিকভাবে বলা যায়, আজকের প্রবল কালবৈশাখী পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলার উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে চলেছে। যেহেতু ঝড়ের গতিবেগ অত্যন্ত বেশি এবং সঙ্গে রয়েছে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত, তাই সাধারণ মানুষকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন দরকার সচেতনতা ও আত্মরক্ষা।